হাওজা নিউজ এজেন্সি: যে পরিস্থিতি আত্মার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে, তাকে দৃঢ় সংকল্প ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে ছিন্ন করতে হবে। আমাদের ভুল ধারণা, মিথ্যা অভ্যাস ও অর্থহীন আকাঙ্ক্ষার বিষাক্ত জমি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। এই মুক্তি সম্ভব কেবল সচেতন জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে, যার লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি— যা আমাদের নিজের প্রকৃত মঙ্গলও বটে।
এ কাজে প্রধান শক্তি হবে বুদ্ধিবৃত্তিক দৃঢ়তা। এটি বোঝায় কীভাবে আল্লাহর পথে আত্মার জন্য সর্বোত্তম জীবনযাত্রা সম্ভব এবং আমাদের জীবনকে এমনভাবে প্রস্তুত করে যাতে তা আল্লাহর জন্য হয়— তাঁর সত্য ও নির্দেশনার জন্য হয়— দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী লোভ ও অহংকারের জন্য নয়।
এটি এমন এক অঙ্গীকার যা মানুষকে আল্লাহর সেবায় নিয়োজিত করে এবং তাঁর আদেশকে নিজের ভেতর ও সমাজে বাস্তবায়নের সাক্ষ্য দেয়। এটি একইসাথে—
আধ্যাত্মিক, কারণ এটি মানুষের অন্তরকে আল্লাহ-জ্ঞান ও প্রকৃত আত্মপরিচয়ের দিকে নিয়ে যায়।
ধর্মীয়, কারণ এটি আল্লাহর আইন মানা ও তার অর্থ বোঝার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।
রাজনৈতিক, কারণ এটি অন্যায় ও বিভ্রান্তিকর বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে ন্যায়ের অবস্থান প্রকাশ করে।
নবী (আ.) ও ইমামদের (আ.) শিক্ষা অনুযায়ী চললে আমাদের আচরণ অন্যদের কাছে রাজনৈতিক পদক্ষেপের মতো মনে হতে পারে, কারণ এটি মানব আচরণের সঠিক পথ দেখায় এবং এমন এক বিশ্বদর্শনের বিরোধিতা করে যা আল্লাহকে উপেক্ষা করে নিজস্ব নিয়ম চাপিয়ে দিতে চায়।
আল্লাহর বিধান মেনে চললে আমরা দুনিয়ার চোখে ভিন্ন, এমনকি কখনো হুমকিস্বরূপ মনে হতে পারি। কারণ আল্লাহর আইন ও মানুষের স্বার্থপর পরিকল্পনা একসাথে চলতে পারে না।
সত্যিকারের আল্লাহ-জ্ঞান আমাদের জীবনকে নতুন দিশা দেয়। এটি কেবল চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং কর্মে প্রতিফলিত হয়। এমনভাবে বাঁচা একপ্রকার "রাজনৈতিক ঘোষণা", যা দেখিয়ে দেয় যে আমরা এমন এক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি যেখানে আল্লাহ ও তাঁর বিধানকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা উপেক্ষা করা হয়েছে।
আমাদের ঈমান জীবনের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করে, এমন এক শৃঙ্খলা যা কেবল ব্যক্তিগত নয় বরং সকল জ্ঞানী মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
অতএব, আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে আলাদা না রেখে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করতে হবে। তবেই তিনি আমাদের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ করবেন এবং হৃদয়ে শান্তি ফিরিয়ে দেবেন। এ ছাড়া মানুষের মর্যাদা ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব নয়।
সবশেষে, আমাদের একটি স্পষ্ট ও স্থায়ী পরিচয় গড়ে তুলতে হবে— যাতে জীবনের প্রতিটি দিক, প্রতিটি সম্পর্ক ও প্রতিটি কাজ সত্য ও কল্যাণের পথে এগিয়ে যায়।
অন্তরের ও বাইরের জীবনের মধ্যে যেন কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে। আমাদের কর্ম একক লক্ষ্যে কেন্দ্রীভূত হতে হবে। নইলে তা নানা বিচ্ছিন্ন উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং একই সাথে আত্মা ও বুদ্ধিকে দুর্বল করে দেয়। ধর্মের স্থান আমাদের জীবনে আংশিক নয়— বরং আমাদের পুরো জীবনের সঙ্গে একীভূত হওয়া উচিত।
আপনার কমেন্ট